রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অগ্ন্যাশয়ের (প্যানক্রিয়াস) দ্বারা সৃষ্ট এটা একটা হরমোন। ইন্সুলিনের অনুপস্থিতিতে আমাদের শরীরের কোষগুলি শক্তির উৎস হিসাবে শর্করাকে ব্যবহার করতে পারেনা। যখন আপনার ডায়াবেটিস (বহুমূত্র রোগ) থাকে, আপনার শরীর ইন্সুলিন তৈরি করতে পারেনা অথবা যে ইন্সুলিন আপনার তৈরি হয় তা ঠিকঠাক কাজ করেনা। এজন্য, আপনার বাহ্যিক ইন্সুলিন দরকার। আপনার যে ইন্সুলিনের প্রয়োজন তা আপনি একটা ইন্সুলিন পেন, একটা সিরিঞ্জ, অথবা ইন্সুলিন পাম্পের দ্বারা এটাকে (শরীরের ভিতরে) প্রয়োগ করতে পারেন। ইন্সুলিন গ্রহণ করলেঃ আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে আপনাকে কর্মশক্তি দেয় আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে
পেট খালি থাকা অবস্থায় ক্ষরিত ইন্সুলিন মৌলিক ইন্সুলিন রূপে জ্ঞাত। খাবার খাওয়ার পরে রক্তে বর্ধিত শর্করার মাত্রার প্রতিক্রিয়ায় ইন্সুলিন ক্ষরণ বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস রোগে এই প্রক্রিয়া আক্রান্ত হয় যার জন্য বাইরে থেকে ইন্সুলিন (শরীরের মধ্যে) প্রয়োগ করা দরকার।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া হচ্ছে একটা অবস্থা যা রক্তে অস্বাভাবিকভাবে কম গ্লুকোজের মাত্রা চিহ্নিত করে, সচরাচর 70 mg/dl-এর থেকেও কম। এটা ঘটতে পারে যদি আপনিঃ মাত্রাতিরিক্ত ব্যায়াম করেন যথেষ্ট না খান একবারের খাবার বাদ দেন খুব বেশি ওষুধ নেন যাই হোক, আপনার রক্তে গ্লুকোজের ব্যক্তিগত লক্ষ্যগুলি, এবং কোন মাত্রা আপনার পক্ষে অত্যন্ত কম, সে সম্পর্কে আপনার স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীর সঙ্গে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ।
যখন আপনার রক্তে শর্করা কম থাকে প্রথমে, দ্রুত-কাজ করে এমন কোনও কার্বোহাইড্রেট (শ্বেতসার) 15 গ্রাম খান বা পান করুন, যেমনঃ তিন থেকে চারটা গ্লুকোজ ট্যাবলেট গ্লুকোজ জেল-এর এক টিউব শক্ত মিছরির (চিনি-ছাড়া নয়) চার থেকে ছয় টুকরো ½ কাপ ফলের রস 1 কাপ মাঠা-তোলা দুধ ½ কাপ নরম পানীয় (চিনি-ছাড়া নয়)
ঝাঁকুনি (কম্পন) ঘামতে থাকা মাথা ঘোরা খিদে দ্রুত হৃৎস্পন্দন ঝাপসা দৃষ্টি মাথার যন্ত্রণা দুর্বলতা বা অবসাদ যদি আপনার রক্তে কম শর্করার সমস্যা থাকে, সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত কাজ করে এমন 15 গ্রাম চিনিযুক্ত খাবার খান বা পান করুন, যেমনঃ ½ ক্যান (ধাতুপাত্র) সাধারণ সোডা (ডায়েট নয়!) 1 টেবিল চামচ (অথবা কোন আসল চিনির দুটো প্যাকেট) আপনি দ্রুত খেতে পারেন এমন 3টা শক্ত মিছরি (খণ্ড)
রাত্রিকালীন হাইপোগ্লাইসেমিয়া অথবা রাতের সময়ের হাইপো (রক্তে স্বাভাবিকের থেকে কম মাত্রার গ্লুকোজ থাকা) সেইসমস্ত মানুষদের মধ্যে সচরাচর দেখা যায় যাঁরা ইনসুলিন নিয়ে তাঁদের ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করেন। কোনও হাইপো থেকে একবার জেগে উঠলে তবেই শুধুমাত্র উপসর্গগুলো সাধারণতঃ বোঝা যায়। এগুলোর প্রকৃতির কারণে, কোন হাইপোর থেকে জেগে উঠে সাধারণতঃ রাতের সময় ঘটা হাইপো সম্পর্কে আপনি টের পাবেন। সেজন্য মানুষ এমনকি সচেতনও হয়তো হন না যে তাঁদের রাতের সময়ে হাইপো হচ্ছে, সুতরাং কখন রাত্রিকালীন হাইপোগ্লাইসেমিয়া ঘটছে তার লক্ষণ এবং উপসর্গ চিহ্নিত করতে পারা প্রয়োজনীয়। যেক্ষেত্রে রাত্রিকালীন হাইপোগ্লাইসেমিয়া সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ইনসুলিন ব্যবহারকারীদের মধ্যে, এটা কিন্তু সেইসমস্ত মানুষদের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে যাঁরা মুখ দিয়ে খাবার জন্য ডায়াবেটিস-প্রতিরোধক ওষুধ নিয়ে থাকেন।
কখনও কখনও রাত্রিকালীন হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঘটনা ঘটার সময় আপনি হয়তো জেগে উঠতে পারেন। যাই হোক, যদি আপনি না জাগেন, নীচে উল্লিখিত লক্ষণগুলোর একটা বা দুটো লক্ষ্য করতে পারেন যে যখন আপনি ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন তখন হয়তো হাইপোগ্লাইসেমিয়া ঘটে গেছে। অশান্ত ঘুম প্রগাঢ় স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন সকালে মাথাব্যথা রাতে ঘাম মেজাজের পরিবর্তন অবসাদ খিঁচুনি
ডায়াবেটিস রয়েছে এমন শিশুদের মা-বাবাদের পক্ষে, রাত্রিকালীন হাইপোগ্লাইসেমিয়া বিশেষ করে দুশ্চিন্তাজনক হতে পারে। ডায়াবেটিক শিশুদের মা-বাবারা তাঁদের বাচ্চারা ঘুমিয়ে থাকার সময় তাদের ঘাড় পরীক্ষা করতে চাইতে পারেন যদি তাঁরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকেন যে রাত্রিকালীন হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়তো ঘটছে।
ত্বক বা চামড়ার ঠিক নীচে শরীরের চর্বিযুক্ত অংশগুলির ভিতরে যখন আপনি এটাকে প্রয়োগ করেন তখন ইন্সুলিন সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করে। ক্লিনিক থেকে বেরোবার আগে, নিশ্চিত হন যে আপনি জানেন কিভাবেঃ ইন্সুলিন প্রস্তুত করতে হয় ইন্সুলিন প্রয়োগ করতে হয় ইঞ্জেকশন প্রয়োগের জায়গা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করা
আপনার শরীরের মধ্যে ইন্সুলিন দেবার বিভিন্ন রকমের যন্ত্র আছে; সিরিঞ্জ, ইন্সুলিন পেন, ইন্সুলিন পাম্প, এবং আই-পোর্ট হচ্ছে ইন্সুলিন প্রদান করার বিভিন্ন বিকল্প। সিরিঞ্জ- সাধারণ সিরিঞ্জের থেকে ইন্সুলিন সিরিঞ্জ অন্যরকম। সেগুলি অপেক্ষাকৃত সরু, প্রায় ব্যথাহীন সূঁচ থাকে এবং অপসারণযোগ্য সূঁচের রক্ষাকবচ সহ আসে। সঠিক মাত্রার ইন্সুলিন টেনে নিতে আপনাকে সহায়তা করার জন্য সিরিঞ্জের বাইরের অংশ রেখার দ্বারা চিহ্নিত থাকে। পেন (কলম)- এটা একটা ইন্সুলিন কারট্রিজ (একসঙ্গে থাকে বা আলাদাভাবে কেনা হয়) আর ডোজ বা মাত্রা মাপার জন্য একটা ডায়াল দিয়ে গঠিত, এবং ডোজ প্রয়োগ করার জন্য ব্যবহার করে ফেলে দেবার যোগ্য কলমের সূঁচের সাথে ব্যবহার করা হয়। ইন্সুলিন সিরিঞ্জের তুলনায় ইন্সুলিন কলম কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা প্রদান করেঃ নাড়াচাড়া করা সহজসাধ্য সঠিকতা
উষ্ণ এবং সাবানভর্তি জল দিয়ে হাত ধোবেন। যদি ধোঁয়াটে ইন্সুলিন ব্যবহার করেন, শিশিটা দুহাতের মধ্যে রোল করুন বা ঘোরান (ঝাঁকাবেন না)। অ্যালকোহল (সুরা) দিয়ে ইন্সুলিন শিশির রবারের ছিপি পরিস্কার করুন। আপনি যত ইউনিট সংখ্যার ইন্সুলিন নেবেন তার সমান বাতাস দিয়ে সিরিঞ্জ ভর্তি করুন। শিশির মধ্যে সূঁচ ঢোকান এবং ইন্সুলিন শিশির মধ্যে বাতাস ঠেলে ঢোকান। সিরিঞ্জ আর শিশি উল্টে ধরুন এবং আপনার ইন্সুলিনের ডোজ বা মাত্রা টেনে নিন। চামড়ার ভিতরে সূঁচটা ঢোকান ডোজ দেবার জন্য সিরিঞ্জের শেষ প্রান্তে থাকা ডাঁটি বা পেষকযন্ত্র চাপুন
একটা নতুন কলমের সূঁচকে মোচড় দিন বা ক্লিক করুন। যদি দরকার হয়, সূঁচের থেকে কোন বাতাস থাকলে তা সরিয়ে দিতে কলমটাকে ভর্তি করুন। কলমের শেষ প্রান্তের নবটাকে ঘোরান (বা “ডায়াল” করুন) যত সংখ্যার ইউনিট দরকার সেইদিকে। চামড়ার মধ্যে সূঁচটাকে ঢোকান ডোজ দেবার জন্য কলমের শেষ প্রান্তে থাকা বোতামটা টিপুন যতটা ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে তার উপর নির্ভর করে পাঁচ বা দশ পর্যন্ত গুনুন ব্যবহৃত কলমের সূঁচ ফেলে দেবার জন্য সরিয়ে দিন ইন্সুলিন দেবার জন্য সিরিঞ্জ আর কলম ব্যবহার করার কয়েকটা পরামর্শঃ অপেক্ষাকৃত ছোট সূঁচের অর্থ ইঞ্জেকশনের অস্বস্তি অপেক্ষাকৃত কম। যাই হোক, কত দ্রুত ইন্সুলিন ফলপ্রদ হয় তার উপরে ইঞ্জেকশনের গভীরতা প্রভাব বিস্তার করে। ইন্সুলিন ডোজের সঙ্গে মানানসই করার জন্য সিরিঞ্জের আকার (উদাহরণস্বরূপ, 1cc, 1/2cc, 3/10cc) সমান ধরণের বেছে নিন। কোনও সিরিঞ্জ/কলমের সূঁচ পুনরায় ব্যবহার করবেন না। কোনও সিরিঞ্জ কারোর সঙ্গে ভাগাভাগি করবেন না। যথাযথভাবে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ/কলমের সূঁচ ফেলে দিন।
চামড়ার ঠিক নীচে শরীরের চর্বিযুক্ত অংশগুলিতে যখন আপনি এটা প্রয়োগ করেন তখন ইন্সুলিন সবচেয়ে ভালো কাজ করে। নিম্নোক্তগুলো ইন্সুলিন প্রয়োগ করার জায়গা উপরের বাহুগুলোর পিছনে পেট (নাভির কাছাকাছি) উরুগুলোর সামনের আর পাশের জায়গায় কোমরের উপর দিকের পিছনে পশ্চাৎ দিকে (নিতম্ব) সর্বশেষ কয়েকটি ইঞ্জেকশন নেওয়ার জায়গা থেকে 1 ইঞ্চি দূরে রাখুন। নাভি এবং কোনও ক্ষতচিহ্ন থেকে 2 ইঞ্চি দূরে রাখুন। যেসমস্ত জায়গাগুলো চোট পাওয়া, নরম; ফোলা অথবা স্পর্শ করলে শক্ত লাগে সেইসমস্ত জায়গাগুলো ব্যবহার করবেন না। ইঞ্জেকশনের জায়গা বাছার সময় কয়েকটা লক্ষণীয় ব্যাপার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ইঞ্জেকশন নেবার জায়গাগুলি ব্যবহার করলে লাইপোডিসট্রফির ঝুঁকি কমাতে পারে, চর্বির স্ফীতি যা একই জায়গায় বারংবার ইঞ্জেকশন দিলে চামড়ার নীচে গজিয়ে ওঠে। সঠিক জায়গা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করার দুটো নিয়ম একই সাধারণ স্থানে প্রত্যেক দিন একই সময়ে প্রতিটা ইঞ্জেকশন দেবার জায়গার মধ্যে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে (ব্যবহার করুন) ইঞ্জেকশনের কোণ এবং চামড়ার ভাঁজ বেশির ভাগ লোক চামড়ার একটা ভাঁজ বা পরত খিমচে ধরেন এবং ওই চামড়ার ভাঁজে 90° কোণে সূঁচটা ঢোকান। আপনার চামড়া সঠিকভাবে খিমচে ধরার জন্য, নিম্নোক্ত এইসমস্ত ধাপগুলো অনুসরণ করুনঃ আপনার বুড়ো আঙ্গুল এবং দুটো আঙ্গুলের মধ্যে চামড়ার দুই ইঞ্চি মত জায়গা চেপে ধরুন, নীচে থাকা মাংসপেশীর থেকে চামড়া আর চর্বি তফাতে টেনে ধরুন। (যদি আপনি ইঞ্জেকশন নেবার জন্য একটা 4 বা 5 মিলিমিটারের ছোট কলমের সূঁচ ব্যবহার করেন)। সূঁচটা ঢোকান। মাংসপেশীর মধ্যে যাতে সূঁচটা না ঢুকে যায় সেজন্য (চামড়ার) পরত বা ভাঁজটা ধরে রাখুন। ইন্সুলিন প্রয়োগ করার জন্য ডাঁটি বা পেষক যন্ত্রটা ঠেলে দিন (অথবা আপনি কলম ব্যবহার করলে বোতাম)। চামড়ার ভাঁজের চেপে ধরা মুঠিটা ছেড়ে দিন। চামড়ার থেকে সূঁচটা সরিয়ে নিন। নজরদারি